ইমাম গাজ্জালির রুকইয়া নির্দেশনাসমূহ

ইস্তিহাযা (নিরবচ্ছিন্ন রক্তপাত) বন্ধ করার রুকইয়া

ইবনু কুতাইবা বর্ণনা করেন যে আনসার গোত্রের একজন নারী দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাতের সমস্যায় ভুগছিলেন এবং তার রক্তপাত থামছিল না। ওই নারী একজন ধার্মিক পুরুষের কাছে তার সমস্যার কথা জানালে তিনি কুরআনের একটি আয়াত লিখে তাকে সেটি গলায় ঝুলিয়ে রাখতে বলেন। সেই আয়াতটি হলো আল-কুরআনের নির্দেশনা:

﴿وَقِيلَ يَا أَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَمَاءُ أَقْلِعِي وَغِيضَ الْمَاءُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ﴾
“এবং বলা হলো: হে পৃথিবী, তোমার পানি শুষে নাও এবং হে আকাশ, (বৃষ্টি) থামাও। তারপর পানি কমে গেল এবং কাজ সমাপ্ত হয়ে গেল।”
(সূরা হুদ, আয়াত ৪৪)

এছাড়া তিনি আরেকটি আয়াতও উল্লেখ করেন:

﴿قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْراً فَمَن يَأْتِيكُم بِمَاءٍ مَّعِينٍ﴾
“বলুন: তোমরা কি দেখেছ, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদের জন্য প্রবাহমান পানি আনবে?”
(সূরা আল-মুলক, আয়াত ৩০)

এই দোয়াগুলো ব্যবহারের পর সেই নারীর রক্তপাত বন্ধ হয় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এছাড়াও বর্ণিত আছে যে সুফিয়ান ইবন ‘উইয়াইনা বা শাফিক আল-মিশরি এ দোয়াটি প্রস্রাবজনিত সমস্যার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতেন। যারা এ সমস্যা নিয়ে ভুগতেন, তারা দোয়াটির মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করতেন।

কিছু সতর্কতা ও নির্দেশনা:

১. ইস্তিহাযা (Mustahadhah): ইস্তিহাযা হলো এমন এক ধরনের রক্তপাত যা নারীর মাসিক নয়, কিন্তু এটি মাসিকের মতোই প্রদর্শিত হয়। ফলে নারীরা দীর্ঘ সময় ধরে এই সমস্যায় ভুগে থাকেন।

২. সতর্কতা: জেনে রাখা উচিত যে, হায়েজ, নিফাস বা অপবিত্র অবস্থায় কুরআনের আয়াত ঝুলিয়ে রাখা নিষিদ্ধ। এর কারণ হলো, এটি কুরআন ও আল্লাহর কালামের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন হিসেবে গণ্য হতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য সংশ্লিষ্ট ফিকহী নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত।

৩. রেফারেন্স আয়াত:

সূরা হুদ, আয়াত ৪৪:
“وَقِيلَ يَا أَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَمَاءُ أَقْلِعِي…”

সূরা আল-মুলক, আয়াত ৩০:
“قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْراً…”

৪. সুফিয়ান ইবন ‘উইয়াইনা: সুফিয়ান ইবন ‘উইয়াইনা (১০৭-১৯৮ হিজরি) একজন বিখ্যাত মুফাসসির ও মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি কুফায় জন্মগ্রহণ করেন এবং মক্কায় বসবাস করতেন। তার সম্পর্কে ইমাম শাফিয়ি বলেছিলেন, “যদি ইমাম মালিক ও সুফিয়ান না থাকতেন, তাহলে হিজাজের ইলম হারিয়ে যেত।”

উল্লেখযোগ্য উৎস:

তাজকিরাতুল হুফফাজ (১/২৪২)

শিফাতুস সফওয়া (নং ২১৭)

হিল্যাতুল আউলিয়া (৭/২৭০)

তারিখ বাগদাদ (৯/১৭৪)

ওফায়াতুল আইয়ান (১/২১০)

মিযানুল ইতিদাল (১/৩৯৭)


📚 খাওয়াসুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৯৫
✍️ ইমাম আল গাজ্জালি
⌨️ রুদি আবু হুমাইরাহ
📮 পুঁজক ইয়াং হাউস ইলমু রুকইয়া

Share:

Facebook
Twitter
LinkedIn
Scroll to Top