কেউ এই যাদুতে আক্রান্ত হলে সময় মত কোন কাজ করতে পারে না। সবসময় শরীরে দুর্বলতা, অলসতা ও অবসান্নতা লাগে। সারাদিন শুয়ে বসে থাকতে ইচ্ছা করে। প্যারানরমাল সমস্যায় আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা ফেইস করেন প্রোডাক্টিভিটি ও রিযিকে। বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সবচেয়ে বেশি। অসফল করার জন্য এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এই যাদু টি করা হয়।
এই যাদুতে আক্রান্ত হলে কেউ ডাক্তারের কাছে কোনো কারণ খুঁজে না পেলে বলে দেয় যে হয়তো ভিটামিন, আয়রন ক্যালসিয়ামের অভাব আছে, এবং এই ধরনের বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে দেন। কিন্তু এসব ওষুধ সেবন করেও দেখা যায় যে সাময়িক কিছুটা উপকার হলেও পরবর্তীতে আগের মতই হয়ে যায়। আবার কখনো কখনো দেখা যায় মোটেই উপকার হয় না মাসের পর মাস চিকিৎসা করেও রোগী ফল পায়া না।
একজন মানুষকে দুর্বল ও অলস করার জন্য যে যাদু করতে পারে সেটা তো আমাদের ধারণার অতীত। অনেকেই কল্পনাও করেনা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
এটি যে শুধু যাদুর কারণেই হয় তা নয়, বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। যেমন –
যাদু-বান
জ্বীনের আছর
বদনজর
মানসিক রোগ
এই যাদুতে নিম্নের লক্ষণসমূহ পাওয়া যায়।
১। একাকিত্বতা পছন্দ করা।
২। সম্পূর্ণরূপে আলাদা থাকা।
৩। সর্বদায় চুপচাপ থাকা।
৪। মানুষের সাথে সামাজিকতাকে ঘৃণা করা।
৫। মানসিক অস্থিরতা।
৬। সব সময় মাথা ব্যাথা।
৭। অবসাদ, প্রায়শই অলসতা লাগা।
৮। কোনো কাজ করতে গেলে অসুস্থ হয়ে যাওয়া।
এই প্রকার যাদু যেভাবে করা হয়ে থাকেঃ
যাদুকর জ্বিনকে সেই ব্যক্তির কাছে প্রেরণ করে যাকে যাদু করতে চায়। আর জ্বিনকে নির্দেশ দেয় যে, সে যেন ব্যক্তিটির মস্তিষ্ককে নিজ আয়ত্বে নিয়ে আসে। আর এ যাদুর প্রভাব এতোই বেশি হয় জ্বিন যত শক্তিশালী হয়।
এই প্রকার যাদুর চিকিৎসাঃ
রোগী রুকইয়াহ শুনবে অলসতার কারণ নির্ণয়ের জন্য যে, এটি যাদু, জ্বীন বদনজর নাকি শারীরিক মানসিক কোনো কারণে হয়েছে। তবে উত্তম অডিও শোনার চেয়ে নিজে তিলাওয়াত করা।
রুকইয়াহ শুনে যদি কোন প্রতিক্রিয়া না হয় তাহলে এটি প্রমাণ করে যে তার অসুস্থতা শারীরিক মানসিক কোনো কারণে হয়েছে। আর যদি কোনো প্রতিক্রিয়া ও রিয়্যাকশন অনুভব করে তাহলে নিচের নিয়মে এক থেকে দুই মাস রুকইয়াহ করলে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
প্রথমে পাক পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যার কথা বলে সুস্থতার জন্য প্রাণভরে দু’আ করুন, তারপর দরুদ ইস্তিগফার পড়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।
১. সিহরের আয়াত গুলো প্রতিদিন দুইবার তিলাওয়াত করবেন।
২. নিম্নের সূরা গুলো প্রতিদিন তিলাওয়াত করবেনঃ
(১) সূরা ফাতেহা, (২) সূরা বাকারা (৩) আল-ইমরান (৪) সূরা ইয়াসীন, (৫) আসসাফফাত, (৬) আদুখান, (৭) যারিয়াত, (৮) হাশর, (৯) মাআরেজ, (১০) গাশিয়া (১১) যিলযাল, (১২) আলকুরিয়া, (১৩) ফলাক ও (১৪) সূরা নাস।
৩. তিলাওয়াত করা সম্ভব না হলে এগুলোর অডিও শুনবেন।
৪. সবমিলিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ ঘণ্টার মতো রুকইয়াহ তিলাওয়াত করবেন বা অডিও শুনবেন। যদি আরো বেশি শুনতে পারেন, আরো ভালো!
৫. একদিনে সব তিলাওয়াত করা বা অডিও শুনে শেষ করা সম্ভব না হলে এভাবে রুকইয়াহ করবেন – আজকে যেগুলো তিলাওয়াত করেছেন বা যে অডিও গুলো শ্রবণ করেছেন এইগুলো ছাড়া বাকি গুলো এরপরের দিন তিলাওয়াত করবেন বা অডিও শুনবেন। এভাবে ধারাবাহিকভাবে রুকইয়াহ করবেন।
৬. প্রতিদিন নিয়মিত পড়া পানি পান করবেন দৈনিক কয়েকবার।
৭. মাথা ব্যথা বা বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা করলে সেখানে পড়া তেল মালিশ করবেন।
রুকইয়াহ গোসল
প্রতিদিন রুকইয়াহ’র গোসল করবেন। তবে গোসলের পানির সাথে দুই চা-চামচ লবণ, পাঁচ চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এবং ৩-৫ চা-চামচ গোলাপজল মিশিয়ে নিবেন। তবে অবশ্যই মাঝেমধ্যে বরই পাতার গোসল করবেন।
এভাবে প্রতিদিন গোসল করা সম্ভব না হলে কিছু দিন অন্তর অন্তর লাগাতার সাতদিন রুকইয়াহ গোসল করবেন।
ব্যায়াম
প্রতিদিন ফজরের সালাতের পর যিকির-আযকার শেষ করে সুস্থতার নিয়তে শরীর ঘামানোর উদ্দেশ্যে অন্তত ২০ ওয়ার্মআপ বা ব্যায়াম করবেন। যেমন পুশ আপ, চেইন আপ, দৌড়ানো, দড়িলাফ অথবা যেকোনো ব্যায়াম করতে পারেন। প্রয়োজনে হালকা শীতের কাপড় পড়ে নিতে পারেন। আর বাসায় এইগুলো করলে ফ্যান বন্ধ করে নিবেন।
এক্ষেত্রে রুকইয়াহ’র গোসল ওয়ার্মআপ বা ব্যায়ামের পরপরই করে নিলে বেশি উপকৃত হবেন। এভাবে রুকইয়াহ’র পাশাপাশি অন্তত ১৫-২০ দিন ধারাবাহিক ব্যায়াম করলে আপনার লাইফ বদলে যাবে ইনশাআল্লাহ।
রুকইয়াহ’র সময় রোগী যদি পেটে ব্যাথা বা বমি ভাব অনুভব করে তাহলে বুঝতে হবে পেটে যাদু আছে। আর পেটের যাদু নষ্টের জন্য ইস্তেফরাগ (বমি) এবং জোলাপ (লুজ মোশন) করতে হবে।
ইস্তেফরাগের নিয়মঃ
প্রথমে পানি ২ লিটার, বরই পাতা ১৪ টা, কিছু তুলসী পাতা, দুই চা-চামচ ভিনেগার, তিন চা-চামচ মধু, এক চা-চামচ লবণ, দুই চা-চামচ কালোজিরার তেল নিয়ে নিবেন। এরপর বরই পাতা ও তুলসী পাতা বেটে বা ব্লেন্ড করে নিবেন। তারপর এ সবগুলো একসাথে মিক্স করে করবেন। এরপর উপরোক্ত সূরা গুলো পড়বেন , সম্ভব না হলে শুধু সিহরের কমন আয়াত গুলো ৩/৭ বার করে পড়ে এগুলোতে ফুঁ দিবেন।
অতঃপর তা দ্রুত ১০-১২ মিনিটের মধ্যে খেয়ে বমি করবেন। এভাবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ইস্তেফরাগ করবেন। লাগাতার তিনদিন বা সাতদিন। প্রতি মাসে অন্তত দুই বার। সপ্তাহে তিনদিনের বেশি করবেন না।
লক্ষণীয়ঃ
১. সকাল সন্ধ্যার ও অন্যান্য সময়ের হেফাজত মাসনুন আমল গুলো গুরুত্বসহকারে করতে হবে।
২. ঘুমের সময়ের মাসনুন আমল গুলো নিয়মিত গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে।
৩. প্রত্যেক সালাতের পর অক্ষমতা ও অলসতা থেকে দুআ করবেন।
৪. প্রত্যেক সালাতের পর ও অন্য সময় মাঝেমধ্যে নিচের দুআটির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবেন –
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الرِّجَالِ.
৫. প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করা। এটা খুবই জরুরী। যেভাবে পুর্বে বলা হয়েছে সে নিয়মে করতে পারেন।
৬. প্রতিদিন সামান্য গরম পানির সাথে মধু পান করুন।
৭. শরীরের জন্য উপকারী খাবার গুলো খাবেন।
৮. ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযু করবেন।
৯. টাইম মতো খাওয়া দাওয়া করবেন এবং ঘুমাবেন।
১০. মাঝেমধ্যে শক্তিবর্ধক ফলফ্রুড খাবেন।
১১. রোগী তার আরামের জন্যে কোন ঔষধ ব্যবহার করবে না।
১২. আর গোনাহ থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকবেন। জেনে রাখুন পাপের কোনো চিকিৎসা নেই।
উপরোক্ত নিয়মে ১-২ দুই মাস রুকইয়াহ করবেন। ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবেন। সমস্যা জটিল হলে অভিজ্ঞ রাক্বীর সরণাপন্ন হয়ে সরাসরি রুকইয়াহ করতে পারেন।